Manna Dey Biography in Bengali - মান্না দের জীবনী
Manna Dey Biography in Bengali
কফি হাউস মানেই মান্না দে, পুরানো ক্লাসিক মানেই যেমন কিশোর কুমার, আর ঠিক তার পাশেই রাজ করছেন মান্না দে।কি সুন্দর গান, যা শুনলে।শ্রোতা রা গানের গভীরে ঢুকে যায় সব কিছু ভুলে। 'এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি', এই গাধ শুনে এখনো মানুষ মনে মনে ফিল করেন, সত্যিই যেন তারা এই কূলে বসে আছেন। এখনো কিছু মানুষ কফি হাউস গেলেই তাঁর বিখ্যাত গান 'কফি হাউসের সেই আড্ডা' মুখে মুখে আওড়ায়। জেনে নেওয়া যাক, এই পছন্দের মানুষটির জীবনী।
মান্না দের জীবনী, বিখ্যাত গান, পুরস্কার
- আসল নাম: প্রবোধ চন্দ্র দে।
- বর্তমান নাম: মান্না দে।
- জন্ম: ১ লা মে, ১৯১৯।
- জন্মস্থান: কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ।
- মৃত্যু: ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩
- মৃত্যু স্থান: ব্যাঙ্গালোর
- মৃত্যুকালে বয়স: ৯৪
- পিতা: পূর্ণচন্দ্র দে
- মাতা: মহামায়া দে
- কাকা: কৃষ্ণচন্দ্র দে
- স্কুল: ইন্দু বাবুর পাঠশালা, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল।
- কলেজ: স্কটিশ চার্চ কলেজ।
- দাম্পত্য সঙ্গী: সুলোচনা কুমারান।
- সন্তান: শুরোমা ও সুমিতা।
- প্রথম কাজ: তামান্না চলচ্চিত্র (১৯৪৩),
- গানের ভাষার সংখ্যা: ২৪ টি।
- গানের সংখ্যা: প্রায় চার হাজার।
- কার্যকাল: ১৯৪২-২০১৩
- আত্মজীবনী: জীবনের জলসাঘরে (২০০৪)
জন্ম - Manna Dey's Birthday
১৯১৯ সালের ১ লা মে, কলকাতায় জন্ম হয় এই প্রবাদপতিম শিল্পীর। তাঁর আসল নাম প্রবোধচন্দ্র দে। তাঁর ডাক নাম ছিল মান্না দে। এই নামেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন।
পিতা ও মাতা - Parents
পিতার নাম পূর্ণচন্দ্র দে ও মাতার নাম মহামায়া দে। মা বাবাও ছিলেন সঙ্গীতের অনুরাগী।
কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে :- কাকা ছিলেন ১৯২০ ও ৩০-এর দশকের বিখ্যাত গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক। তাঁর কাকা ছিলেন অন্ধ। এই অন্ধ হয়েও তিনি বাধতেন নতুন গান।
শৈশব জীবন - Childhood
ছোটো থেকেই মান্না দের গানের প্রতি ছিল প্রবল অনুরাগ, যে বয়সে ছোটো রা ফুটবল খেলত মাঠে, সে বয়সে মান্না দে গান নিয়ে চর্চা করতেন। তবে মান্না দে ছোটো থেকেই ছিলেন বেশ ডাকাবুকো। মারপিট করতেন। এমনকি গোবর গুহ এর কাছে শিখেছিলেন কুস্তি ও বক্সিং। তাঁর বাবা চাইতেন ওকালতি করুক । কিন্তু গানের পরিবেশ যার রক্তে সে কী করে করবে ওকালতি।
পড়াশোনা - Educational Background
প্রথমে তিনি 'ইন্দুবাবুর পাঠাশালা' তে পড়াশোনা করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল তারপর স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন। কলেজে তিনি গান শুনিয়ে আসর মাতিয়ে রাখতেন। এরপর বন্ধুরা ইন্টার –কলেজ মিউজিক কমপিটিশিনে দিয়ে দিল তাঁর নাম, তখন কোনো তালিম না নিয়েই তিনি গাইলেন গান প্রথম হয়ে পুরষ্কার জিতে নেন। পেলেন রুপোর তানপুরা।
সঙ্গীত জীবন - Musical Journey
তাঁর সঙ্গীত জীবনের অনুপ্রেরণা ছিল তাঁর বাবা ও মা, কিন্তু তার পাশাপাশি তাঁর কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন তাঁর আসল অনুপ্রেরণা। প্রথম জীবনে কাকার কাছেই তালিম নেন, এরপর ওস্তাদ দাবীর খানের কাছে রেওয়াজ শুরু হয়। ১৯৪২ সালের মাত্র ২৩ বছর বয়সে তাঁর কাকার হাত ধরে চলে আসেন মুম্বাই এ। তাঁর কাকার সঙ্গীত পরিচালনায় সৃষ্ট ছবি তামান্নাতে প্রথম ডেবিউ করেন।
সোলো গায়ক হিসাবে তিনি প্রথম খ্যাতি লাভ করেন ' রাম রাজ্য' ছবিতে। এই ছবিতে তিনি গেয়েছিলেন 'গায়ি তু তো গায়ি সীতা সতী' এটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৪৩ সালে। স্বয়ং গান্ধিজী এই ছবি দেখেছিলেন।
এরপর ১৯৫০ সালে তিনি শচীন দেব বর্মনের সাথে মাশাল ছবিতে কাজ করেন। এই ছবিতে দুটি গান গেয়েছিলেন, যা হল ' উপর গগন বিশাল' এবং ' দুনিয়াকে লোগো'। ঐরপর থেকেই শুরু হয় শচীন দেব বর্মনের সাথে জুটি বেঁধে কাজ। এই জুটি আমাদের দিয়েছেন অনেক সুন্দর মনোরম গানের ডালি।
এরপর ১৯৫৩ সালে তিনি খ্যাতি লাভ করেন দো বিঘা জমি মুক্তির পর। সলিল চৌধুরীর কম্পোজিশনে তিনি এই ছবিতে গান ।আর এই সালেই তাঁর বাংলা আধুনিক গান প্রকাশ পায়। “কত দূরে আর নিয়ে যাবে বলো”, “হায় হায় গো, রাত যায় গো”। এই সব গান শুনে স্তম্ভিত দর্শকমহল। এরপর নিজের সুরে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ১৯৫৬ সালে “তুমি আর ডেকো না পিছু ডেকো না”, “তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়” প্রকাশ পায়।
এরপর ১৯৫৮ তে আবার প্রকাশ করলেন, চাঁদের আশায় নিভায়ে ছিলাম”, “এ জীবনে যত ব্যথা পেয়েছি”, “এই কুলে আমি, আর ওই কুলে তুমি, মাঝখানে নদী ঐ বয়ে চলে যায়”। এভাবেই তিনি বাংলা গানের জগতে নিজের জায়গা পাকা করে নিলেন। প্রতিষ্ঠিত হলেন সুরকার হিসাবে। ১৯৬৬ তে যখন সুধীন দাশগুপ্ত উত্তম কুমার অভিনীত শঙ্খবেলা ছবিতে গান করানোর কথা ভাবেন, তখন কেউ রাজি হননি, সবাই চেয়েছিলেন এ গান হেমন্তই করুক।
Read More: Ke Tumi Tandraharani Lyrics by Manna Dey
কিন্তু সুধীন দাশগুপ্ত একদম অনড় ছিলেন, তিনি চান এটা মান্না কে দিয়েই শুরু হোক, অবশেষে সবাই রাজি হল, তাঁর কন্ঠ থেকে বেরিয়ে এল সেই সুমধুর গান, কে প্রথম কাছে এসেছি। এরপর থেকেই চলতে থাকে উত্তম-মান্না -সুধীন জুটি।এরপরেই জুটি বাঁধেন লতা-আশার সাথে। লতার সাথে তাঁর প্রথম জুটি বেঁধে গান হল , 'লপট কে পোট পাহানে বিক্রল'। আর আশার সাথে প্রথম গান হল, 'রাত গয়ি ফির দিন আয়া'।
তিনি গেয়েছেন প্রায় চার হাজারের বেশি গান। তিনি হিন্দি ও বাংলা ছাড়া গেয়েছেন মৈথিলি,কন্নড়, গুজরাতি, পঞ্জাবি, মারাঠি, , মালায়ালম প্রভৃতি ভাষায় গান। ছোটো ছেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপর তাঁর টান ছিল। তিনি গেয়েছেন ৪৭ টি রবীন্দ্রসঙ্গীত। ১৯৬১ সালে 'বহে নিরন্তর' দিয়ে তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের যাত্রা শুরু। হিন্দি ভাষায় তাঁর কালজয়ী গান এখনো মানুষের মুখে মুখে।
'পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া', 'এয় মেরি জোহরা জবি', 'এক চতুরনার' মত কালজয়ী গান।
তাঁর বিখ্যাত বাংলা গান আজও মানুষের মুখে ফেরছ। যেমন, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই', আমি যে জলসাঘরে, আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না', 'আমি যামিনী তুমি শশী হে', ।
তাঁর বিখ্যাত বাংলা গান আজও মানুষের মুখে ফেরছ। যেমন, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই', আমি যে জলসাঘরে, আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না', 'আমি যামিনী তুমি শশী হে', ।
ব্যক্তিগত জীবন - Personal Life, Married Life
১৯৫৩ তে কেরলের মেয়ে সুলোচনা কুমারণকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই কন্যা রয়েছে সুরোমা এবং সুমিতা। সুলোচোনা ছিলেন ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্রী। পেশায় ছিলেন অধ্যাপিকা। ভালো গান গাইতেন। ২০১২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সুলোচনা মারা যান। সুলোচোনা মারা যাবার পর তাঁর বাঁচার ইচ্ছেই ছিল না।
মান্না দে যখন অসুস্থ ছিলেন তাঁর কেবিনে রেখেছিলেন স্ত্রী এর ছবি। স্ত্রীকে এতটাই ভালোবাসতেন, অসুস্থ অবস্থাতেই তাঁর স্ত্রীয়ের মৃত্যুর পর অ্যালবম বার করতে চেয়েছিলেন। চারটি গান তিনি নিজে লিখেছিলেন, আর দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। কিন্তু অসুস্থার কারণে রেকর্ড করা হয়নি।
খাদ্যরসিক মান্না দে
তাঁর স্ত্রী খুব ভালো রান্না করেন। দক্ষিণ ভারতীয়, উত্তর ভারতীয়, মোগলাই, চিনে, কন্টিনেন্টাল থেকে বিশুদ্ধ বাঙালি সবরকম রান্নাই তিনি করতেন। আর মান্না চেটেপুটে খেতেন। তিনি যেখানে যেতেন সেখানের রেস্টুরেন্ট খাবার আস্বাদন করতেন। চাঁদনি মেট্রো স্টেশনে গায়ে ধোসা, ইডলি, উত্তপম, পকোড়া, দইবড়া ইত্যাদি খেতেন। গিরিশপার্কের নিরজ্ঞন আগারের ডিমের ডেভিল, মাটন কোপ্তা, ব্রেস্ট কাটলেট খেতেন। ভজহরিতে গিয়ে ইলিশ, চিংড়ি, পাবদা থেকে শুক্তো সব খেতেন।
পুরষ্কার - Awards
- 'মেরে হুজুর' ছবির জন্য ১৯৬৯ সালে পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
- ১৯৭১ সালে ‘নিশি পদ্মে’ ছবির গানের জন্য পান চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
- পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরষ্কার। (১৯৭১)
- লতা মঙ্গেশকর পুরষ্কার (১৯৮৫)
- মাইকেল সাহিত্য পুরষ্কার , ঢাকা (১৯৮৮)
- শ্যামল মিত্র পুরষ্কার (১৯৯০)
- আজীবন সম্মাননা (২০০১)
- ডি.লি.ট (২০০৪-রবীন্দ্রভারতী)
- পেয়েছেন পদ্মভূষণ (২০০৫)।
- পেয়েছেন দাদাসহেব ফালকে (২০০৭)।
- ডি.লি.ট (২০০৭-যাদবপুর)
মৃত্যু - Manna Dey Death Day
২০১৩ সালের সালের ২৪শে অক্টোবর তিনি আমাদের এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তবে তিনি রয়েছেন মননে বরণে হৃদয়ে।
খ্যাতি
তাঁর আত্ম জীবনী 'জীবনের জলসাঘরে' ২০০৫ সালে প্রকাশ পায়। তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি তথ্যচিত্র, যা ২০০৮ সালে প্রকাশ পায়। এই তথ্যচিত্রের শ্যুটিং কফি হাউসে করা হয়।
জনপ্রিয় বাংলা গান - Manna Dey's Most Popular Bengali Songs
- কফি হাউসের সেই আড্ডা
- সবাই তো সুখী হতে চায়।
- যদি কাগজে লিখ নাম
- কতদিন দেখিনি তোমায়।
- এই কুলে আর ওই কুলে তুমি।
- খুব জানতে ইচ্ছে করে।
- সে আমার ছোটো বোন।
- শাওন রাতে যদি।
- দ্বীপ ছিল শিখা ছিল।
- সেই তো আবার কাছে এলে’
জনপ্রিয় হিন্দি গান - Manna Dey Popular Hindi Songs
- Puchho Na Kaise Maine Rain Bitayee
- Ay Mere Pyare Watan, Ay Mere Bichhade Chaman
- Laga Chunari Main Daag
- Ek Chatur Naar Karke Singar
- Tu Pyar Ka Saagar Hain
- Ay Meri Zoharajabi
- Zindagi Kaisi Hai Paheli
- Aaja Sanam Madhur Chandani Main Hum