বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি - Vishwakarma Puja Paddhoti, Mantra

বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি
বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি
বন্ধুরা আজকের এই পোস্টে আমরা দেখে নেবো বাড়িতেই বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি টি। মানে নিজেরা মন্ত্র দ্বারা সহজ পদ্ধতিতে কিভাবে বিশ্বকর্মা পুজো করবো। এই পোস্ট টি শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা এই বছর পুরোহিত দ্বারা বিশ্বকর্মা পুজো করতে পারছেন না বিভিন্ন কারণবশত নচেৎ পুরোহিত দ্বারাই বিশ্বকর্মা পুজো করা সবথেকে উত্তম।

বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি

  • বন্ধুরা এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাদের বিশ্বকর্মা ঠাকুরের মূর্তি বা ফোটো একটি নিতে হবে। যদি ফটো হয় তাকে পরিষ্কার করে একটি আসনের ওপরে স্থাপন করতে হবে। এবং যখন আসনের ওপরে স্থাপন করবেন তখন তার নিচে একটু ধান, দূর্বা ঘাস দিয়ে তার উপরে অবশ্যই স্থাপন করবেন।
  • ঠাকুর পাতার পরে তার সামনে একটি অষ্টদল পদ্মের আল্পনা করবেন। এবং তার ওপরে ঘট স্থাপন করবেন। ঘট টি হতে পারে মাটির, পিতলের বা কাঁসার। এই ঘটে জল পূর্ণ করবেন এবং ঘটের সামনে স্বস্তিক চিহ্ন অঙ্কিত করবেন। 
  • ঘটের ওপরে আম্রপল্লব রাখবেন ৫টি, ৭টি বা ৯টি এইরকম যেন পাতা ওই আম্রপল্লবে থাকে। এবং প্রত্যেকটি পাতায় একটি করে লাল সিঁদুরের ফোঁটা অবশ্যই দেবেন। এই আম্র পল্লবের ওপরে একটি ফল রাখবেন। কলা হতে পারে, ডাব হতে পারে বা সুপারি হতে পারে। এবং এই ফলের উপরে একটি গামছা দিতে পারেন বা সাদা রঙের চেলি কাপড় আপনারা দিতে পারেন। দশকর্মার দোকানে এটি আপনারা পেয়ে যাবেন। ঘটের সামনে একটি ছোট চাঁদমালা ঝোলাতে পারেন। এবং ঘট টিকে একটি অবশ্যই পুস্প মালা, অর্পণ করবেন। 
  • এরপরে বাড়িতে থাকা আপনাদের সমস্ত যন্ত্রাংশ যেগুলো আপনাদের কর্মের সঙ্গে যুক্ত সেই সমস্ত যন্ত্রাংশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ঠাকুরের আসনের একটি পাশে রাখবেন এবং প্রত্যেকটির ওপরে একটি করে সিঁদুরের ফোঁটা দেবেন। যদি আপনার গাড়ি থাকে গাড়ির পুজো করতে চান তাহলে বাড়িতে থাকা সমস্ত গাড়ি কে আপনারা অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করবেন এবং তার ওপরে স্বস্তিক চিহ্ন তাদের সামনে এঁকে দেবেন।
  • এরপরে আপনারা ভোগ হিসাবে যে সমস্ত দ্রব্য ভগবানকে নিবেদন করতে চান সেগুলো আসনের পাশে রেখে দেবেন। এরপরে ঘটির সামনে একটি আসন পেতে আপনারা বসবেন পুজো করতে এবং সর্বপ্রথম আপনারা গঙ্গা জল দিয়ে সমস্ত জায়গাটা শোধন করে নেবেন।
  • এক্ষেত্রে যে সমস্ত পুষ্প আপনারা পুজোতে লাগবে সেই পুষ্পগুলোর ওপরে গঙ্গা জল ছেটাবেন এবং কিছুটা পরিমাণে সাদা, চন্দন আপনারা ছিটিয়ে নেবেন। ধূপ দীপ ইত্যাদি আপনারা এরপরে আসনের পাশে জ্বালিয়ে দেবেন।
  • এরপরে গণেশাদি, পঞ্চ দেবতার পূজো আপনাদের করতে হবে। প্রথমে ফুল নিয়ে গণেশের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে মন্ত্র বলবেন, "এষ গন্ধ পুষ্পে ওঁ গাং গনেশায় নমঃ"
  • এরপরে একটু ফুল নিয়ে আপনারা ধূপের ওপরে দেবেন, "এষ ধূপঃ , ওঁ গাং গনেশায় নমঃ"
  • এরপর দ্বীপের ওপরে দেবেন, "এষ দ্বীপ ওঁ গাং গনেশায় নমঃ"।
  • এরপর যে নৈবিদ্য আপনারা তৈরি করে রেখেছেন সেই নৈবিদ্যের ওপরে আপনারা একটু ফুল দিয়ে বলবেন, "এত নৈবিদ্যম ওঁ গাং গনেশায় নমঃ"
  • এই একই পদ্ধতিতে এরপর আপনারা সূর্যের পুজো, তারপর বিষ্ণুর পুজো, তারপর শিবের পুজো এবং সব শেষে দেবী দুর্গার পুজো আপনারা করে নেবেন।
  • পঞ্চ দেবতার পুজো হয়ে যাওয়ার পর আপনারা বিশ্বকর্মা পুজো শুরু করবেন। একটা তামার পাত্র সামনে রাখবেন যেখানে আপনারা এই সমস্ত ফুল, জল ইত্যাদি সমর্পণ করবেন। এই তাম্র পাত্রের একটু জল দিয়ে আপনারা মন্ত্র উচ্চারণ করবেন, "ইদং স্নানীয়ং ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ" এরপরে একটু ফুল অবশ্যই দেবেন।
  • এরপরে আপনারা যদি কোনো বস্ত্র নিবেদন করতে চান সেই হাতে ধরবেন। একটু ফুল নেবেন এবং মন্ত্র বলবেন,  "ইদং বস্ত্রম ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ"।
  • যে পৈতে বিশ্বকর্মাকে দেওয়া হবে সেই পৈতে হাতে নেবেন, নিয়ে বিশ্বকর্মা ঠাকুরের মূর্তির সামনে একটু ফুল নিয়ে ওই পৈতে  হাতে নিয়ে উচ্চারণ করবেন, "ইদং যজ্ঞসূত্রম ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ"
  • একটু সাদা চন্দন একটা ফুলের মধ্যে নেবেন, নিয়ে সেই ফুল সহ চন্দন নিয়ে উচ্চারণ করবেন, "এষ গন্ধ ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ" 
  • এরপরে ফুল নেবেন ফুল নিয়ে বিশ্বকর্মার উদ্দেশ্যে বলবেন, "ইদং পুস্পম ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে বৌষট"।
  • এবার কিছুটা পুস্প নিয়ে ধূপের ওপরে দিয়ে বলবেন, "এষ ধূপঃ ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ" যদি আপনাদের কাছে ঘণ্টা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই এই সময় ঘন্টার ধ্বনি করবেন।
  • এরপর কিছুটা পুস্প নিয়ে দ্বীপের ওপরে অর্থাৎ প্রদীপের ওপরে দিয়ে বলবেন, "এষ দ্বীপ ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে স্বাহা"।
  • যে সমস্ত নৈবিদ্য আপনারা বিশ্বকর্মার উদ্দেশ্যে নিয়ে এসছেন, তার উপরে কিছুটা পরিমাণের পুষ্প দিয়ে আপনারা মন্ত্র উচ্চারণ করবেন, "এত, নৈবেদ্যম ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নিবেদয়ামি।"
  • এরপরে যে সমস্ত ফলমূল আপনারা নিয়ে এসছেন ঠাকুরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করার জন্য তার উপরে একটু করে সিঁদুরের ফোঁটা দেবেন এবং পুষ্প ছিটিয়ে দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করবেন, "এতানি ফলমূলানি ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ"
  • এরপরে একটা পাত্রে পানীয় জল দেবেন দেবতার উদ্দেশ্যে কিছুটা পরিমাণের কর্পূর ওই জলের সাথে মিশিয়ে দেবেন।  এবং ফুল দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করবেন, "এতৎ পানীয়ম ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ"
  • দেবতার উদ্দেশ্যে যে পুষ্প মাল্য আপনারা নিবেদন করতে চান সেই পুষ্পমাল্য অর্থাৎ ফুলের হার আপনারা হাতে নেবেন এবং মন্ত্র উচ্চারণ করবেন, "ইদং পুষ্পমাল্যং ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ" এবং এরপর এই পুষ্পমাল্য দেবতার গলায় পরিয়ে দেবেন।
  • এরপর পান এবং সুপারি হাতে নিয়ে উচ্চারণ করবেন, "এত তম্বুলং ওঁ বাং বিশ্বকর্মনে নমঃ"
  • এরপর বিশ্বকর্মা ঠাকুরের হস্তির উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করবেন, "এতে গন্ধ পুষ্পে, ওঁ হস্তিনে নমঃ।"
  • এরপর যে সমস্ত যন্ত্রপাতি বা যানবাহনের ওপরে আপনারা পুষ্প দিয়ে পুজো করতে চান সেই সমস্ত যানবাহনের ওপরে একটু পুস্প এবং অল্প পরিমানের আতপ চাল নিয়ে তার ওপরে দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করবেন, "ওঁ যন্ত্রা দিভ্যো নমঃ"।

বিশ্বকর্মা পুজোর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

এরপরে যারা পুষ্পাঞ্জলি দিতে চান তারা কিছুটা পরিমাণের গঙ্গা জল হাতে নিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। তারপরে ফুলের ওপরে চন্দন ছিটিয়ে নিয়ে বেল, পাতা, ফুল ইত্যাদি হাতে নিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করবেন,

দেবশিল্পীন মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধকঃ।
পূজাং গৃহাণ বিধিবৎ কল্যাণং কুরু মে সদা ।। ১।।
আয়ুর্যশঃ বলং দেহি শিল্পে দেহি শুভাং মতি ।
ধনং দেহি, যশো দেহি, বিশ্বকর্মণ প্রসীদ মে ।।
শিল্পচার্য্যং নমস্তুভ্যং নানালংকার ভূষিতম ।
মম বিঘ্নবিনাশায় কল্যাণং কুরু মে সদা ।।
এই মন্ত্র উচ্চারণ করে নিয়ে আপনারা পুষ্পটি ঘটের ওপরে বা ঠাকুরের চরণে দিয়ে দেবেন। এইভাবে পর পর তিনবার এই মন্ত্র উচ্চারণ করে ফুল অর্পণ করতে হবে।

বিশ্বকর্মা পুজোর প্রণাম মন্ত্র

এরপরে আপনারা হাতজোড় করে প্রণাম মন্ত্র পাঠ করবেন।

দেবশিল্পিন মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধকঃ ।
বিশ্বকর্মণ নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্ট প্রদয়ক ।।

  • এরপরে আপনারা দেবতার উদ্দেশ্যে আরতি দেখাবেন। আরতি দেখাবার সময় সর্বপ্রথম পঞ্চ প্রদীপ দ্বারা আরতি করবেন। যদি পঞ্চ প্রদীপ না থাকে তাহলে বাড়িতে থাকা প্রদীপ দ্বারাই আপনারা আরতি দেবতাকে দেখান। এবং তারপরে অবশ্যই কর্পূর জ্বালিয়ে সেই কর্পূর দিয়ে আপনারা দেবতার উদ্দেশ্যে আরতি নিবেদন করবেন।
  • এরপরে ধূপকাঠি দেখাবেন, ধূপকাঠি দেখানো হয়ে গেলে আপনারা ফুল দিয়েও আরতি করতে পারেন এবং তারপরে আপনারা জল শঙ্খ দিয়েও আরতি করতে পারেন। এইভাবে সম্পূর্ণ আরতিটি অবশ্যই করবেন এবং শঙ্খধ্বনি অবশ্যই করবেন।
  • পুজো সাঙ্গ হওয়ার পরেই কিছুক্ষণের জন্য পুজোস্থল ফাঁকা করে দেবেন। তার কিছুক্ষণ পরে এসে আপনারা নিবেদিত ভোগ অবশ্যই সকলে মিলে গ্রহণ করবেন।

শেষ কথা

আপনাদের সুবিধার্থে সহজে এবং সংক্ষিপ্ত আকারে বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি আলোচনা করলাম। আশা করি পোস্ট টি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। যদি আজকের লেখা টি আপনাদের ভালো লেগে থাকে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। সকলকে জানতে সাহায্য করুন। সকলে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সকলের ওপরে বিশ্বকর্মার কৃপা আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। এই শুভ কামনা নিয়ে আজকের মতন বিদায় নিচ্ছি। নমস্কার।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url