Durga Puja Kobita সেরা দুর্গাপুজার কবিতা - Best Durga Puja Poem in Bengali

Durga Puja Poem in Bengali
Durga Puja Poem in Bengali (দুর্গা পুজার কবিতা): বাঙালির জাতীয় উৎসব হল দুর্গাপূজা। বর্ষার শেষে শরৎকালে যখন সোনালী রোদে মাতা বসুন্ধরা ঝলমল করে ওঠে, খেত ফসলে পরিপূর্ণ হয়। সরোবরে পদ্মফুল ফোটে তখন আকাশে বাতাসে বেজে ওঠে আনন্দময়ী দুর্গার আগমনী বার্তা। নয় দিন ধরে দেবী মায়ের নয়টি ভিন্ন রূপ এর পূজা করা হয়। এই পূজা উপলক্ষে আমরা সকলেই উৎসবের আনন্দে মেতে উঠি। এই সময় স্কুল কলেজ অফিস আদালত বন্ধ থাকে। সবাই নতুন জামাকাপড় পরে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। বাঙালির মনে দুর্গা পূজোর আনন্দ কে তুলে ধরতে আজ আমরা দুর্গা পূজার কবিতা গুলি নিয়ে চলে এসেছি।

দুর্গাপুজা কবিতা - Durga Puja Kobita in Bengali

1. দুগ্গা
- প্রীতি

যে মেয়েটা ডাকাবুকো
ভয় নেই যার চোখে
অন্যায় দেখুক যেখানে
সে দু হাত দিয়ে রোখে

যে মেয়েটা পুলিশ হবার
স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে
সেই মেয়েটার মধ্যে আমার 
দুগ্গা মা যে আছে

যে মেয়েটার বাবার অসুখ
ছোট্ট ভাইটা পড়ে
ভেঙে না পড়ে মেয়েটা নিজেই
সংসারের হাল ধরে।

সারা সকাল সবজি নিয়ে
বাজারে বেচে রোজ
সেই মেয়েটারই মধ্যে করি
দুগ্গা মায়ের খোঁজ।

যে মেয়েটা স্বপ্ন দেখে
দেশকে দেবে সোনা
লড়ছে মাঠে পান্তা খেয়ে
চলছে যে দিন গোনা
খেলায় সে যে আনবে পদক
এই পণ বুকেতে রাখে।
সেই মেয়েটার মধ্যে আমার
দুগ্গা মা যে থাকে।

যে মেয়েটা সংসারটা
সামলায় একা হাতে
যে মেয়েটা ক্লান্তি বিহীন
দিনে এবং রাতে
সবকিছু কাজ সামলে
সে দেয় পড়াশোনায় ডুব
সেই মেয়েটার মধ্যে খুঁজি
দুগ্গা মায়ের রূপ।

হাজার মেয়ে লড়ছে যে আজ
দুহাতে দশ কাজে
প্রতিটি মেয়ের মধ্যে
মা যে আছে নানান সাজে
এক দুর্গা আলো করুক
পুজো প্যান্ডেল পরে
আর এক দুর্গা এগিয়ে চলুক
বাংলার প্রতি ঘরে।


2. সবার পুজো দুর্গাপুজো
লেখা - তিলক কুমার ভট্টাচার্য

ছেঁড়া গেঞ্জিটাকে সেলাই করে
তার উপরে ঠলঠলে ফতুয়া পরে
সবাইকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে যাওয়া
লোকটাকে বাবা বলে

এক কৌটো গোবিন্দভোগ চাল
আর সামান্য ঘি বাচিয়ে রেখে
পুজোর মধ্যে একদিন পোলাও রান্না করা
মহিলাকে মা বলে

বন্ধুর জন্মদিনে পাওয়া চকলেট টা কে
সালোয়ার কামিজের ওড়নায়, লুকিয়ে,
ভাইয়ের জন্য বেঁধে আনা
মেয়েটাকে দিদি বলে

কাঠি আইস ক্রিম টা
অর্ধেক গলিয়ে ফেলে,
হাতে নিয়ে দিদির জন্য
মাঠ পেরিয়ে ছুটতে থাকা
ছেলেটা কে? ভাই বলে

ফুলে ওঠা নতুন তাঁতের শাড়ি পরে
দুটো ছোট ছোট ছেলে মেয়ের
হাত ধরে বেরোনো
বাতে পঙ্গু বৃদ্ধাকে ঠাকুমা বলে

ডিজাইনার পাঞ্জাবি পরে অঞ্জলি দিতে দিতে
পাশের বাড়ির নতুন শাড়ি পড়া মেয়েটিকে
কলেজ পড়ুয়া ছেলেটির আড় চোখে দেখাটাকে
ভালো লাগা বলে।

টরেন্টো, দুবাই থেকে ফিরে
সবাই মিলে একজোট হয়ে
অষ্টমীর রাতে স্কচের আসরে
পাড়ার ইলেক্ট্রিশিয়ান বন্ধু
হাবুকে নিমন্ত্রণ করাটাকে
ছোটবেলার বন্ধুত্ব বলে।

শিল্পীর হাতে ছ মাসের মেহনতে বানানো
দূর্গা ঠাকুরটিকে নারী ছিন্ন করে
বিক্রি করে সেই টাকায় অনাথ অসহায়
পথশিশুদের জামা কাপড়
কিনে দেওয়াটা কে মানবিকতা বলে

সপ্তমীর সকালে বউ, ছেলে, মেয়ে নিয়ে
টানা গাড়িতে করে গ্রামের বাড়িতে হাজির হয়ে,
কাকা জ্যাঠাদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে
তাদের আশীর্বাদ নেওয়া মানুষ গুলোকে
পরিবার বলে

বিশ্বের সব থেকে মনোরম
আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে
বিবাহিত মহিলারা এ কদিন
যে বাড়িটাকে স্বর্গ বলে মনে করে
সেই বাড়িটাকে বাপের বাড়ি বলে

আর এই চিত্রকল্পগুলোকে
একসাথে সাজিয়ে নিলে যেটা তৈরি হয়
বাঙালিরা এক কথায় তাকে দুর্গাপুজো বলে

Bengali Durga Puja Poems

3. সব দুর্গাই থাকুক সুখে
কবিঃ ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

এক দুর্গা রিক্সা চালায় কুচবিহারের হাটে
এক দুর্গা একশো দিনের কাজে মাটি কাটে
এক দুর্গা রাস্তা বানায় পিচ ও পাথর ঢালে
এক দুর্গা রোজ চুনো মাছ ধরছে বিলে খালে
এক দুর্গা করছে মাঠে দিনমজুরের কাজ
এক দুর্গা খিদেয় কাঁদে, পায়নি খেতে আজ
সবাই জানি, এদের কারো হয়না কোনও পূজো
এরা তো মা তোমার মতো নয়কো দশভুজো
সব দুর্গার চোখে-মুখেই ফুটবে হাসি কবে
মাগো, তোমার পুজো সেদিন সত্যি সফল হবে

এক দুর্গা পাথর ভাঙে রোজই আসানসোলে
এক দুর্গা পেটের জ্বালায় খনিতে কয়লা তোলে
এক দুর্গা সাত-আট বাড়ি কষ্টে বাসন মাজে
এক দুর্গা কারখানাতে ব্যস্ত নানান কাজে
এক দুর্গা চা-বাগানে তোলে চায়ের পাতা
এক দুর্গা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরেই সারায় ছাতা
সবাই জানি, এদের কারো হয়না কোনও পুজো
তাই বলি মা, এদের চোখেও পূজোর খুশি খুঁজো
সব দুর্গার চোখে-মুখেই ফুটবে হাসি যবে
মাগো, তোমার পূজো সেদিন সত্যি সফল হবে

এক দুর্গা হাসপাতালের সবার চেনা আয়া
এক দুর্গা, নার্সদিদি তাঁর মনে ভীষণ মায়া
এক দুর্গা সবজি বেঁচে নিজের পায়ে দাঁড়ায়
এক দুর্গা মুরগি কাটে, নিজেই পালক ছাড়ায়
এক দুর্গা হোটেল চালায়, বানায় মাংস-ভাত
এক দুর্গা বুট-পালিশে জোরসে চালায় হাত
এমনি হাজার দুর্গা যারা পায় না কোনও পূজো
এদের দুঃখ-কষ্ট তুমিই দরদ দিয়ে বুঝো
সব দুর্গার চোখে-মুখে ফুটলে হাসি তবে
মাগো, তোমার পূজো সেদিন সত্যি সফল হবে

4. দুর্গা পূজার আগমনী কবিতা
লেখা - দুর্গা বেরা

এবার যখন মর্ত্যে আসবি
জ্যান্ত হয়েই আসিস মা
মন্দিরের ওই পুতুল হয়ে
আর যেন চেয়ে থাকিস না
তুই নাকি তোর দশ হাত দিয়ে
মহিষাসুর নিধন করিস?
হয় না ঘরে দুগ্গা হয়ে
দেখবো কেমন লড়তে পারিস।

যে নারীরা জন্ম দেয়
নর এবং নারীকুল
তোর পায়েতে মন্ত্র পড়ে
অঞ্জলি দেয় অশ্রু ফুল
তারাই কিন্তু মানব স্রষ্টা
তারাই কিন্তু জাতির মূল
সবাই জানে সেসব কথা
কিন্তু ওরা মানে কই?
তাই নিপীড়ন জল খাবারে
বধুর গায়ে আগুন ওই
নরের জন্মদাত্রী নারীর
এটাই কি মা খাজনা?
এবার যখন মর্ত্যে আসবি
জ্যান্ত হয়েই আসিস মা
মন্দিরের ওই পুতুল হয়ে
আর যেন চেয়ে থাকিস না

শিলিং ফ্যানে ঝুলছে নারী
বৃদ্ধাশ্রমে কাঁদছে মা
অশুভ শক্তির বিনাশিনীর
এমন চুপ যে মানায় না
রড ঢুকিয়ে পিষছে যোনি
আস্তা কুঁড়ে কন্যা ভ্রূণ
আজও পাচার হচ্ছে নারী
তুই কি অন্ধ নিদারুণ
মানব জন্মদাত্রী নারীর
এটাই কি পাওনা
এবার যখন মর্ত্যে আসবি
জ্যান্ত হয়েই আসিস মা
মন্দিরের ওই পুতুল হয়ে
আর আর যেন চেয়ে থাকিস না

সদ্যোজাত কন্যা নাশে
গলা টিপে জন্মদাতা
মারছে স্রষ্টা মরছে সৃষ্টি
ও মূর্তি জানিস কি তা
শিশু, কিশোরী পৌঢ়া মাতার
যত্রতত্র শরীর ভোগ
আইন কানুন টাকায় চুপ
ফাইল বন্দি অভিযোগ
ধর্ষকের কোনো রূপ নেই মা
ঘরের কিংবা বাইরের লোক
দাঁড়িয়ে দেখে তোর এই সমাজ
পেছনে হাসে সামনে শোক
নরের জন্মদাত্রী নারীর
এটাই কি মা খাজনা?
এবার যখন মর্ত্যে আসবি
জ্যান্ত হয়েই আসিস মা
মন্দিরের ওই পুতুল হয়ে
আর যেন চেয়ে থাকিস না

কৈলাসে আর যাস না ফিরে
নারীকে ভীত রাখিস না
সব মেয়েদের মধ্যে চাই
জাগ্রত এক দুগ্গা মা
কৈলাসে আর যাস না ফিরে
স্বরক্ষিত নারী গড়িস মা
সব মেয়েদের মধ্যেই চাই
জাগ্রত এক দুগ্গা মা।

5. তোমার দুর্গা আমার দুর্গা
লেখাঃ সুব্রত পাল

তোমার দুর্গা মহালয়া ভোরে শরৎ মাখছে গায়
আমার দুর্গা এখনো দেখছি ফুটপাতে জন্মায়।
তোমার দূর্গা অকাল বোধন একশো আটটা ফুল
আমার দুর্গা দূর থেকে দেখে খিচুড়ির ইস্কুল।
তোমার দুর্গা আগমনী গান, গিরি রাজকন্যার
আমার দুর্গা ঘর, দোর, ভাসা বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার।
তোমার দুর্গা প্রতিবার আসে বাবা, মার বাড়িতেই
আমার দুর্গা মার কোলে পিঠে, বাবার খবর নেই।
তোমার দুর্গা টেক্কা দিয়েছে এবার থিমের পুজো
আমার দুর্গা ইঁট বয়ে বয়ে এক্কেবারেই কুঁজো।
তোমার দুর্গা হুল্লোড়ে মাতে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে
আমার দুর্গা বাঁচতে শিখছে, অতীতকে ছুঁড়ে ফেলে।
তোমার দুর্গা আলো, ঝলমল চিনে না অন্ধকার,
আমার দুর্গা, রোজ সেজেগুজে খুঁজে তার সংসার
তোমার দুর্গা শপিং মলের কফির ধোঁয়ায় ওড়ে
আমার দুর্গা চা বানাচ্ছে তিন রাস্তার মোড়ে।
তোমার দুর্গা বহু জাতিকের বহুজন হিতায়চো
আমার আমার দুর্গা কালকে যেমন আজও তথৈবচ
তোমার দুর্গা ছবির ফ্রেমের শিউলি এবং কাশে
আমার দুর্গা এখনো আশায় কেউ যদি ভালোবাসে
তোমার দুর্গার ধুনুচি নাচের ঢ্যাং কুরকুর ঢাকে
আমার দুর্গা ঘুরেই মরছে দশ চক্রের পাকে।
তোমার দুর্গা অঢেল খাবার অঢেল নষ্ট হয়
আমার দুর্গা দিন আনা আনে কিছু নেই সঞ্চয়
তোমার দুর্গা কুলকুল নদী, স্নেহের প্রথম পাঠ
আমার দুর্গার নখের আঁচড়ে ভয়েই শুকিয়ে কাঠ।
তোমার দুর্গা অস্ত্রশানায় সিংহবাহিনী রূপ
আমার দুর্গা কাঁদতে কাঁদতে নির্বাক নিশ্চুপ
তোমার দূর্গা দশভুজা হয়ে অসুরের মাথা কাটে
আমার দুর্গা অপুষ্টি নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে হাঁটে ।
আমার দুর্গা কবে বলো আর তোমার দুর্গা হবে?
আমার আকাশ ভরবে তোমার উৎসবে, উৎসবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url